Sunday, 29 June 2025

গুমের পর কথিত ক্রসফায়ার, ছাত্রদল নেতা জনি হত্যায় ৬২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

 




ছাত্রদল নেতা মো. নুরুজ্জামান জনির অপহরণ, গুম ও কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ মোট ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা দিয়েছেন জনির পরিবার। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর রোববার (২৯ জুন) এ অভিযোগ দায়ের করা হয়।

অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটে নুরুজ্জামান জনি ও তার সহপাঠী মইন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জনির ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে ডিবি পরিচয়ে জনি ও মইনকে আটক করে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, তাদেরকে সেখানে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং পরে ডিবি ঢাকা মেট্রোপলিটন দক্ষিণ কার্যালয়ে নিয়েও নির্যাতন চালানো হয়।

ওই সময় জনির সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুনিয়া পারভিনসহ স্বজনরা খিলগাঁও থানা, ডিবি দক্ষিণ অফিস, ডিএমপি অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করতে থাকেন। কিন্তু পুলিশ বরাবরই তাদের জানায়, জনিকে আটক করা হয়নি।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ আছে, ২০ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর মাঠের আশপাশে চিৎকার শুনতে পান স্থানীয়রা। সি-ব্লকের বাসিন্দা লাভলী বেগম জানান, তিনি “ও মাগো, মা, মা… বাঁচাও”—এই আর্তনাদ শুনেছেন। এ-ব্লকের বাসিন্দা সানজিদা আক্তার সেতুও একই ধরনের চিৎকার শোনার কথা জানান।

ভোররাতে জনির স্বজন ও স্থানীয় মানুষজন মাঠের দিকে গেলে পুলিশকে উপস্থিত দেখতে পান। পুলিশ তখন জানায়, জনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন এবং তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।

পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে জনির পরিবার তার মরদেহ সনাক্ত করে। সেখানে তারা জনির বুকের বাম ও ডান পাশে, দুই হাতের তালুতে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে মোট ১৬টি গুলির চিহ্ন দেখতে পান। তার শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল এবং বিভিন্ন স্থানে আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন ছিল। অভিযোগে বলা হয়, তখন উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মরদেহ গ্রহণ না করলে মামলা দেওয়ার হুমকিও দেন।

রোববার (২৯ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেন জনির বাবা ইয়াকুব আলী। একই দিনে বিএনপির মামলা ও সমন্বয় বিষয়ক প্রধান সালাহউদ্দিন খান গণমাধ্যমকে জানান, “দীর্ঘদিন ধরে কোনো সুরাহা না হওয়ায় আমরা ট্রাইব্যুনালের শরণাপন্ন হয়েছি। আশা করি, দ্রুত ন্যায়বিচার পাবো।”

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবের হোসেন চৌধুরী, আসাদুজ্জামান মিয়াসহ মোট ৬২ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: