Monday, 21 July 2025

১৩ দিনেও খোঁজ মেলেনি চবি ছাত্র অরিত্রের

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হওয়ার ১৩ দিন পরেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানের কোনো সন্ধান মেলেনি। হিমছড়ি সৈকতে ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া এই ছাত্রকে ফিরে পেতে তার মা–বাবার আর্তনাদ ও আকুতি হৃদয় ছুঁয়েছে দেশজুড়ে।অরিত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং বগুড়া জেলার বাসিন্দা। তিনি বাবা–মায়ের একমাত্র সন্তান। নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে তার মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনসহ অনেকেই কক্সবাজারে থেকে প্রতিদিন সমুদ্রপাড়ে খোঁজাখুঁজি করেছেন।

৮ জুলাই সকাল ৭টার দিকে পাঁচ বন্ধু কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে গোসল করতে নামেন। তাদের মধ্যে অরিত্র, সাদমান ও আসিফ ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যান। পরে সাদমানের মরদেহ সৈকতে এবং একদিন পর আসিফের মরদেহ নাজিরারটেকে ভেসে ওঠে। কিন্তু অরিত্রের কোনো খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, “নিখোঁজের পর ওয়াটার বাইক, স্পিডবোট ও ড্রোনের সাহায্যে টানা ১০ দিন হিমছড়ি, ইনানী, সোনাদিয়াসহ আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। অভিযানে ফায়ার সার্ভিস, বিমানবাহিনী, পর্যটন পুলিশ, বিচকর্মী ও লাইফগার্ড সদস্যরা অংশ নেন। কিন্তু কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।”

অরিত্রের বাবা সাকিব হাসান ডেইলি নিউ এজ পত্রিকার সিনিয়র সাব-এডিটর। কর্মসূত্রে ঢাকায় বসবাস করেন। ছেলের নিখোঁজের পর থেকেই কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন তিনি ও তার স্ত্রী। অরিত্রের খোঁজে তারা নাজিরারটেকে গিয়ে আজান দেন, মোনাজাত করেন এবং একজন ধর্মীয় ব্যক্তির পরামর্শে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ চালান।

বিচকর্মীদের সুপারভাইজার মাহবুব আলম জানান, অরিত্রের নিখোঁজের দশম দিন পর্যন্ত পরিবার সৈকতে অবস্থান করে খোঁজ চালিয়েছে। ফিরে যাওয়ার সময় তারা লাইফগার্ড ও বিচকর্মীদের কাছে অনুরোধ করেন যেন তল্লাশি অব্যাহত থাকে।

সি সেইফ সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, “অরিত্রের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা আমাদের হৃদয়ে গভীরভাবে দাগ কেটেছে। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূলজুড়ে হেঁটে হেঁটে তল্লাশি চালিয়েছি। টানা ১১ দিন তা অব্যাহত ছিল।”

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, “১৩ দিন পেরিয়ে গেছে। অলৌকিক কিছু না ঘটলে তার জীবিত ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। হয়তো তার পরিবারও তা মেনে নিয়েছে। তবে তাদের অনুরোধে আমরা এখনো বিভিন্নভাবে খোঁজ রাখছি।”

অরিত্রের বাবা সাকিব হাসান বলেন, “আমার একমাত্র সন্তানকে সাগরে রেখে কীভাবে ঘুমাই? এক বুক হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। বাড়িতে ফিরে তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরবানি দিয়েছি, এতিমখানায় খাবার বিতরণ করেছি। তবে আমরা আবার কক্সবাজারে যাব, ছেলেকে খুঁজতে।”


 


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: