28 Jul 2025

কঠোর পরিশ্রমে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণার স্বপ্নপূরন

আবদুল্লাহ আল শাহিদ খান

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি


 





স্বপ্ন দেখা সহজ, কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজন অদম্য জেদ আর কঠোর পরিশ্রম। এমনই এক তরুণ মো. আল আমিন।

স্বপ্ন দেখা সহজ, কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজন অদম্য জেদ আর কঠোর পরিশ্রম। এমনই এক তরুণ মো. আল আমিন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার পিএইচডি গবেষক। এর আগে গ্র্যাজুয়েট টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ নিয়ে ওহাইও ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। শত প্রতিকূলতা জয় করে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন তিনি। ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য বাবার কাছে টাকা চেয়েও পাননি। ছয় ভাই-বোনের সংসারে, বস্তির ঘর তৈরি করে সংসার চালানো বাবার পক্ষে পড়াশোনার খরচ জোগানো কঠিন ছিল। বাবা চাইতেন, পড়াশোনা বাদ দিয়ে আল আমিন যেন চাকরিতে ঢুকে যায়।

বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আল আমিন হাল ছাড়েননি। তার এক চাচাতো ভাই, যিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, বাবাকে বুঝিয়ে কিছু টাকার ব্যবস্থা করে দেন। সেই দিন আল আমিন বাবাকে বলেছিলেন, ‘যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই, তাহলে আমার মুখ দেখবেন। আর যদি না পাই, কিংবা প্রতিষ্ঠিত না হতে পারি, তাহলে কখনো আপনাদের সামনে আসব না।’ এই কথাগুলো শুধু কিছু শব্দ ছিল না, ছিল আল আমিনের জীবনের এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফর্ম কেনার মতো টাকাও তখন আল আমিনের কাছে ছিল না। ঢাকায় একটি আবাসিক কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল সাড়ে ১০ হাজার টাকা। টিউশন করে জমানো মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে তিনি ভর্তি হন। এরপর ঢাকায় থাকার জন্য যখন বাবার কাছে টাকা চাইলেন, বাবা ফোনটা চাচাকে ধরিয়ে দেন। চাচাও আল আমিনকে পড়াশোনা ছেড়ে চাকরি করার পরামর্শ দেন। হতাশ হয়ে আল আমিন ফোন কেটে দেন। কোচিং সেন্টারের পরিচালকের কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানাতে গিয়ে আল আমিন কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরিচালক তাকে প্রধান পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। সবকিছু শুনে প্রধান পরিচালক দুটি শর্তে আল আমিনকে কোচিংয়ে থাকার সুযোগ দেন: যেকোনো মূল্যে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতেই হবে। যখন প্রতিষ্ঠিত হবেন, তখন কোচিং ফি, থাকা-খাওয়ার খরচ সব পরিশোধ করে দেবেন। আল আমিন লিখিতভাবে এই শর্তে সম্মতি দেন।

আল আমিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পান।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমে এক বড় ভাইয়ের মেসে থাকতেন। পরে টাকার অভাবে মামাতো ভাইয়ের মেসে ওঠেন, যেখানে সিঙ্গেল বেডে একজন চৌকিতে এবং একজন মেঝেতে ঘুমাতেন। একবেলার মিলকে দুই ভাগ করে দুপুর ও রাতে খেতেন। এরপর সাড়ে ছয় কিলোমিটার দূরে একটি লজিং পান, যেখানে দিনে একবেলা পড়ানোর বিনিময়ে দুইবেলা খাবার পেতেন। মামাতো ভাইয়ের সাইকেল নিয়ে প্রতিদিন পড়াতে যেতেন এবং রাতের খাবারের জন্য খাবার নিয়ে আসতেন। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে আল আমিন বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার পিএইচডি গবেষক। এর আগে ওহাইও ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: