Saturday, 12 July 2025

শিবচরে ১০ দিন পর নদী থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

নিখোঁজ হওয়া থেকে মরদেহ উদ্ধার পর্যন্ত: ঘটনাচক্র

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২ জুলাই রাত ১০টার দিকে এনায়েত শেখ হঠাৎ করে বাড়ি থেকে বের হন এবং এরপর আর ফিরেননি। তার পরিবারের সদস্যরা প্রথমে ধারণা করেছিলেন হয়তো কোথাও যাচ্ছেন, কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের তৃতীয় দিনে, ৫ জুলাই তার বড় ভাই ইলিয়াস শেখ শিবচর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

নিখোঁজের দশম দিনে, শনিবার রাত ১০টার দিকে স্থানীয়রা নদীর পাশে দুর্গন্ধ পেয়ে সন্দেহ করেন। দুর্গন্ধের উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে তারা নদীর মাঝখানে কচুরিপানার মধ্যে একটি অর্ধগলিত মরদেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহটি উদ্ধার করে। নিহত এনায়েত শেখ শিবচর পৌরসভার নলগোড়া এলাকার বাসিন্দা এবং ফকু শেখের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহার আলী বলেন, “নদী থেকে মরদেহ উদ্ধার করার পর আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করি। পরিবারের লোকজন মরদেহটি শনাক্ত করেছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় মানুষজন এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন হলেও তারা পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, নিখোঁজ হওয়ার আগে এনায়েতের কোনও শারীরিক বা মানসিক সমস্যার কথা জানা যায়নি। এই মৃত্যু রহস্যময় অবস্থায় হওয়ায় তদন্তে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।

নিখোঁজ হওয়ার পেছনের কারণ ও তদন্তের দিকনির্দেশনা

নিখোঁজ হওয়ার পর ১০ দিন ধরে এনায়েত শেখের সন্ধান পাওয়া যায়নি, যা পরিবারের জন্য অদম্য দুঃখ ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খায়— কী কারণে তিনি হঠাৎ করে বাড়ি থেকে বের হন? কোথায় ছিলেন এই ১০ দিন? মৃত্যু রহস্যের পেছনে কোনও অপরাধমূলক ঘটনা আছে কি না?

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে এবং মরদেহের সঠিক মৃত্যুর কারণ নির্ধারণের জন্য ফরেনসিক রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও, হত্যাকাণ্ডের সম্ভাবনা থাকলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নদী থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহের পরিপ্রেক্ষিত

বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে নদী পাড়ের মানুষজন পানির আশ্রয় নিয়ে বাঁচেন, কিন্তু একই সঙ্গে নদী দুর্ঘটনা ও রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিখোঁজ ব্যক্তি নদীতে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে, কিংবা অন্য কোনও কারণেও মৃত্যু হতে পারে। তাই নদী সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

মাদারীপুরের শিবচরের ময়নাকাটা নদী এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশকে আরও বেশি সচেতন হয়ে এই ধরণের দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

সামাজিক প্রভাব ও করণীয়

নিখোঁজ হওয়া মানুষের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব পালন করাও জরুরি। পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজের পর দ্রুত আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় যোগাযোগ করা উচিত। পাশাপাশি স্থানীয় সমাজও নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধানে সহযোগিতা করতে পারে।

শিবচরের এই ঘটনা আবারো আমাদের সামনে একটি সতর্কবার্তা নিয়ে এসেছে যে, নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের প্রতি আমরা আরও সহানুভূতিশীল ও দায়িত্বশীল হতে পারি। সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পুলিশের কার্যক্রম আরও সুদৃঢ় হলে এমন দুঃখজনক ঘটনা কমে আসবে।

শিবচরের ময়নাকাটা নদী ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

শিবচর উপজেলার ময়নাকাটা নদী সুন্দর ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি অংশ হলেও এখানে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ও নজরদারি নেই। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিসের উদ্যোগে নদীর আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, নিয়মিত পেট্রোলিং, ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এছাড়া, নদীর ধারে সেফটি বারিয়ার ব্যবস্থা ও জরুরি অবস্থায় সহায়তার জন্য দ্রুত যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

সংবাদ সংক্ষেপ

  • ২ জুলাই নিখোঁজ হন এনায়েত শেখ (৩৫), শিবচর পৌরসভার নলগোড়া এলাকার বাসিন্দা।
  • ৫ জুলাই শিবচর থানায় নিখোঁজের জিডি করেন তার বড় ভাই।
  • ১২ জুলাই রাত ১০টার দিকে স্থানীয়রা নদীর ধারে দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।
  • রাত ১২টার দিকে ময়নাকাটা নদীর কচুরিপানার মধ্যে থেকে মরদেহ উদ্ধার।
  • পুলিশের প্রাথমিক বক্তব্য, আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তদন্ত চলছে।

শিবচরে নিখোঁজের ১০ দিন পর নদী থেকে যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার হওয়া একটি দুঃখজনক ও রহস্যজনক ঘটনা। এটি নিছক এক দুর্ঘটনা নাকি অন্য কোনও গূঢ় কারণ রয়েছে, তা জানার জন্য তদন্ত চলমান। একই সঙ্গে এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় নদী পাড়ের নিরাপত্তা ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানের গুরুত্ব। আশা করা যায়, শিবচরের পুলিশ ও প্রশাসন এই ঘটনাটি দ্রুত এবং সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করবে এবং পরিবারের জন্য ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করবে।


 


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: