21 Jul 2025

আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়ার ফজিলত

 

আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তার বান্দারা যখন ইস্তিগফার পড়ে তখন আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।

আল্লাহর ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য ইস্তিগফার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি একটি উত্তম আমল।

আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ হলো আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। মূলত প্রতিনিয়ত আমরা অসংখ্য গুনাহ করে থাকি। আর একবার আস্তাগফিরুল্লাহ বলার কারণে একটি গুনাহ মোচন করা হয়। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রতি ফরজ নামাজের পরে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতেন।

নবী করিম (সা.) বলেন, তোমরা তোমাদের রবের কাছে তাওবা করো এবং তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো।কোরআন এবং হাদিস অনুযায়ী আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার অসংখ্য দোয়া রয়েছে, তবে তার মাঝে সবচেয়ে প্রচলিত দোয়াটি হলো আস্তাগফিরুল্লাহ।

আসতাগফিরুল্লাহ একটি আরবি শব্দ, যা ইসলামি ধর্মে ব্যবহৃত হয়। এর বাংলা অর্থ হলো ক্ষমা করুন বা মাফ করুন। ইসলামে এটি প্রায় সমস্ত ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হয়।

أَستَغْفِرُ اللهَ উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লাহ।

বাংলা অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর এই দোয়াটি ৩ বার পড়তেন।

তিনি আরও পড়তেন أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থ : আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তার কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি। (আবু দাউদ : ৩৫৭৭)

পড়ার নিয়ম : দিনের যেকোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ করতে পারেন। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তায়াআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।

আবার, أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি। অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকেই ফিরে আসছি।

পড়ার নিয়ম : এ দোয়াটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া উচিত। হযরত মোহাম্মদ (সা.) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন। (বুখারি)

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।

পড়ার নিয়ম : সকালে ও সন্ধ্যায় এ দোয়া পাঠ করা উচিত। কেন না হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে। (বুখারি)

এ ছাড়াও, رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ উচ্চারণ : রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আনতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম। অর্থ : হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।

পড়ার নিয়ম : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

আস্তাগফিরুল্লাহ এর ফজিলত:

আসতাগফিরুল্লাহ ব্যবহার করা ইসলামে একটি পরিপূর্ণ সন্ধান। এটি প্রত্যেক ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হয় এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই করতে পারি। আসতাগফিরুল্লাহ ব্যবহার করা মানবজীবনে সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে। যেমন, যখন আমরা কোনো ভুল করি অথবা কোনো দোষ করি, আসতাগফিরুল্লাহ ব্যবহার করে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই করতে পারি। আসতাগফিরুল্লাহ ব্যবহার করা আমাদের জীবনে সুখ ও শান্তি এনে দেয়।

আস্তাগফিরুল্লাহ এর ফজিলত নিয়ে কয়েকটি হাদিস নিম্নে দেওয়া হলো-

নবী করীম (সা.) বলেন, হে লোকেরা, তোমরা তোমাদের রবের কাছে তওবা করো এবং তার কাছে ক্ষমা চাও। আমি প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি ও ক্ষমা চাই। (নাসাঈ)।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কেউ সবসময় এস্তেগফার আঁকড়ে ধরলে আল্লাহ তার প্রতিটি সংকটে পথ খুলে দেন, তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করেন এবং তাকে এমনভাবে জীবিকা দান করেন, সে ধারণাও করতে পারে না। (আবু দাউদ)

অপর একটি হাদীসে এসেছে,

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো বান্দা গোনাহ করে বলল, হে রব, আমি পাপ করে ফেলেছি, আমাকে ক্ষমা করো। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা জেনেছে, তার একজন রব আছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন এবং পাকড়াও করেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। (বোখারি ও মুসলিম)।


হাদিসে আরও এসেছে, কেউ শুক্রবার ফজরের আগে যদি তিনবার বলে ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হায়্যুল কায়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি’ তবে তার গোনাহ সমুদ্রের ফেনা সমান হলেও তা ক্ষমা করে দেওয়া হয়।

আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ হাদিসে কুদসিতে বলেন, হে আমার বান্দা, তোমরা দিনে- রাতে ভুল করে থাক, আর আমি সব পাপ ক্ষমা করি। তাই তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করব। (মুসলিম)।



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: