আশরাফ আহমেদ, হোসেনপুর কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :
গেলো এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে দাম বেড়েছে প্রতিটি সবজির; ৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে, বাড়তি দামে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস। কিশোরগঞ্জে হোসেনপুরে সরজমিনে ,হোসেনপুর,পুমদী, গোবিন্দপুর, সিদলা, রামপুর, সাহেবেরচর,বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভালো মানের গোল বেগুন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুনের দাম দ্বিগুণ, বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা কেজিতে। লম্বা জাতের বেগুনের দাম ৮০-১০০টাকা, মুলা-৫০-৬০ টাকা
ঝিঙা, ধুন্দল, শসা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে; ঢেঁড়স, পটল, কাকরোল কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। ৮০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে শুধু পেঁপে- ৩০ টাকা কেজি। প্রতি পিস জালি কুমড়া ৮০-১০০টাকা, লাউ ৮০-১০০ টাকা।
বাজারে বরবটি প্রতিকেজি ৭০-৮০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কচুমুখী ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচেও- কেজিপ্রতি ২২০-২৪০ টাকা। পাইকারি বাজারে পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
বাজারে আসা ক্রেতারা বলছেন, সবজির এমন নাগালবিহীন দামে খরচ মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। খরচের ধাক্কা সামলাতে পরিমাণ কমিয়ে কিনতে হচ্ছে সবজি।
হোসেনপুর বাজার করতে এসে কৃষক আলামিন বলেন, ‘‘বেগুনের দাম শুনে রীতিমতো আকাশ থেকে পড়লাম। এক সপ্তাহে বেগুনের দাম কেজিতে ৭০ টাকা কী করে বাড়ে! বেগুন না কিনে পেঁপে কিনে বাসায় যাচ্ছি।’’
আরেক ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘সাধারণত এক কেজির নিচে কোনো সবজি কেনা হয় না। আজকে তিন রকমের সবজি আধা কেজি করে কিনে নিয়ে যাচ্ছি। সবজির দাম শুনে মানতেই পারছি না। গত এক বছরের মধ্যে এবারই সবজির দাম এত বেশি।’’
বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এতে করে অনেক ক্রেতাই সবজি না কিনে ফিরে যাচ্ছেন, অনেকে কিনছেন আধা কেজি বা ২৫০ গ্রাম করে। সব মিলিয়ে তাদেরও মুনাফা কম হচ্ছে।
হোসেনপুর কাওনা বাজার ঘুরে দেখা যায়, শনিবার ভোরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সবজির প্রতিটির দাম ছিল বাড়তি। মৌসুমের এ সময়ে ফলন কম হওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন বিক্রেতারা।
গোবিন্দপুর বাজারে সবজির বিক্রেতা হুমায়ুন কবির জানান, পাল্লাপ্রতি সবজির দাম বেড়েছে ৮০-১৩০ টাকা। এতে করে প্রতি কেজি সবজিতে খরচ বাড়ছে। অক্টোবর মাস আসলে সবজির দাম আবার কমে আসবে বলে জানান তিনি।
আরেক ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, ‘‘মার্চ থেকে মাঠে সবজির পরিমাণ কমতে থাকলেও চাহিদা আগের মতোই থাকে। তাই সবজির দাম বাড়ে এ সময়ে। এ ছাড়া রাস্তায় গত বছরের তুলনায় এ বছর বাড়তি খরচ বেড়েছে।”
শুধু সবজি নয়, উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজও। গত সপ্তাহের ৭৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। পাইকারি বাজারে পাল্লাপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৩৯০-৪০০ টাকা।
বাজারে দাম বেড়েছে প্রতিটি মাছের; কেজিতে ৫০-২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। কাঁচকি মাছের দাম গত সপ্তাহে ৪০০ টাকা থাকলেও এ সপ্তাহে ৫০০ টাকা। চাপিলা মাছ ৪০০-৪৫০ টাকা। পোয়া মাছ সাইজভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৬০ টাকায়। শিং-মাগুর কেজিপ্রতি ৪০০-৪৫০ টাকা।
বড় মাছের মধ্যে রুই কেজিপ্রতি ৩২০-৩৮০ টাকা, কাতল ৩৯০-৪২০ টাকা, কালিবাউশ ৩৯০-৪৩০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ টাকা, নদীর পাঙাশ বোয়াল ৭০০-১,০০০ টাকা,
গত সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়েছে ইলিশ মাছেরও। এক কেজির নিচে মাঝারি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০টাকায়, ছোট সাইজের ইলিশ ১,০০০-১,৩০০ টাকা। এক কেজির ওপরে ইলিশের দাম ২,০০০-২,২০০ টাকা পর্যন্ত।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবজি এবং পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে বাজারের প্রতিটি পণ্যের দামে। দাম কমাতে সিন্ডিকেটের কারসাজি, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি এবং বাজার মনিটরিংয়ের ওপর জোর দেন তারা।




0 coment rios: