দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও ২১টি হল সংসদ নির্বাচন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৮ জন এবং হল সংসদসহ মোট প্রার্থী ৪৭৫ জন। ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৮৯৭ জন। প্রশাসন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
এই নির্বাচনে ৮টি প্যানেল এবং ১৭৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবচেয়ে আলোচনায় আছেন চারজন ভিপি প্রার্থী। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের শেখ সাদী, শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ থেকে আরিফউল্লাহ, ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেলের আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল এবং ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু।শেখ সাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের মীর মশাররফ হোসেন হল শাখার সভাপতি। জুলাই আন্দোলনে ভূমিকার কারণে দলীয় পরিচয়ের বাইরে তার আলাদা পরিচিতি রয়েছে। শিবির-সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আরিফউল্লাহ ফার্মেসি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে আসা শিবিরের অভ্যন্তরীণ কোন্দল না থাকায় এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে ধর্মীয় সংবেদনশীলতা বৃদ্ধির ফলে তাদের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঐক্য ফোরামের ভিপি প্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও সাবেক সাংবাদিক সমিতির সভাপতি। জুলাই আন্দোলনসহ একাধিক শিক্ষার্থী আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। জিতু সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি গণঅভ্যুত্থান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন এবং পরে ‘গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ গঠনে ভূমিকা রাখেন।
ভোট গ্রহণ হবে ২১টি আবাসিক হলে, যেখানে বুথ থাকবে ২২৪টি। দায়িত্ব পালন করবেন ২১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা ও সমানসংখ্যক সহকারী। ভোট হবে ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সহায়তা করবেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। ব্যালট পেপার ছাপা হয়েছে আজ সকালে। জাকসুর জন্য তিন পৃষ্ঠার এবং হল সংসদের জন্য এক বা দুই পৃষ্ঠার ব্যালট ছাপানো হয়েছে।
নিরাপত্তায় রয়েছেন প্রায় ১ হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য ও আনসার বাহিনী। স্থাপন করা হয়েছে ৮০টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রক্টর, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক, নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও দুজন ম্যাজিস্ট্রেট সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন। ক্যাম্পাসে ১০ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাবেক শিক্ষার্থীসহ যে কোনো বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশা করি।
হল সংসদে ৩১৫টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৪৩ জন। এর মধ্যে ১২৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছেন এবং ৬৫টি পদে কোনো প্রার্থী নেই। ১১টি ছাত্র হলে ৬৫ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী, ৯টি পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ১০টি ছাত্রী হলে ৫৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী, ৫৬টি পদে কেউ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে প্রার্থী সংকট স্পষ্ট, বিশেষ করে ছাত্রী হলগুলোতে। সবচেয়ে সংকটে ১৩ নম্বর ছাত্রী হল, যেখানে ১২টি পদ ফাঁকা।
ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীবান্ধব জাকসুর প্রত্যাশা সবার। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে জাকসু প্রতিনিধি ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, অতীতে ছাত্রলীগের অসৌজন্যমূলক আচরণ ও একচেটিয়া প্রভাবের কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। জাকসুর মাধ্যমে সে সংকট কাটবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।




0 coment rios: