কুমিল্লায় মা-মেয়ে হত্যা মামলার একমাত্র আসামি মোবারক হোসেনের (৩৪) বিরুদ্ধে আগেও একাধিক ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ ওঠে। একটি ঘটনায় আদালতে মামলা হলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়। বর্তমানে থানায় কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই। তখন গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে সৌদি আরবে চলে যায় মোবারক। কিছুদিন আগে দেশে ফিরে নতুন করে বর্তমান মাদ্রাসায় যোগ দিয়ে আবার শুরু করেন পুরোনো কুকর্ম।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর মে-মেয়ে হত্যাকাণ্ডে নিজের দোষ স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। এ সময় মা-মেয়েকে বালিশচাপা ও গলাটিপে হত্যা করার রোমহষর্ক বর্ণনাও দেন তিনি। এরপর আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
এদিকে ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদন এসে পৌঁছলেই চার্জশিট দেবে পুলিশ। পুলিশ বলছে, আর কেউ জড়িত নয় এই হত্যাকাণ্ডে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , ২০২৩ সালের ২৪ জুন কুমিল্লার ধর্মপুর পশ্চিম চৌমুহনীর হজরত খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদ্রাসা ও এতিমখানায় সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টা করে মোবারক। ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় ওই শিক্ষার্থীকে সে সময় ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যাচেষ্টা করে। সে সময় ওই কক্ষে তার কাছ থেকে পানিপড়া নিতে এক নারী এলে সে সুযোগে দৌড়ে পালিয়ে বাঁচে এই শিক্ষার্থী। ওই মাদ্রাসার শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মোবারক নিজেই।ভাড়া নেওয়া ওই মাদ্রাসা এবং বাসাতেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাসবাসও করতেন মোবারক। পাশের গলিতে ছিল তার শ্বশুরবাড়ি। ওই ঘটনার দিনই আরেক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে কবিরাজ মোবারক। পরে বাড়িতে গিয়ে বাবা-মাকে ঘটনা জানায় ভুক্তভোগী। একই দিনে দুটি ঘটনা ঘটার ফলে দক্ষিণ দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানানো হয়।
তিনি বিচার সালিশে এক লাখ টাকা জরিমানা করে বিষয়টি মীমাংসা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিচারে সন্তুষ্ট হতে পারেনি পরিবারটি। ২০২৩ সালের ১২ জুলাই কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর পরিবার। এরপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে পালিয়ে সৌদি আরব চলে যান মোবারক। সৌদি পুলিশের হাতে দুই বছর আটক থাকার পর চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশে ফিরে আসে।
ভুক্তভোগী ওই শিশুর মা জানান, মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল কবিরাজ মোবারক। সে সময় এক নারী এসে পড়ায় রক্ষা পায়। আমরা স্থানীয় সালিশে বিচার না পেয়ে মামলা করি। এরপর মামলা উঠানোর জন্য সে ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাদের নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। আর ওই অন্য মেয়েটার পরিবারকে দেড় লাখ টাকা দিয়ে নিজ পরিবার নিয়ে এলাকা থেকে চলে যায় মোবারক।মোবারকের বর্তমান মাদ্রাসার আশপাশের বাসিন্দারা জানান, প্রায় তিন বছর ধরে মোবারক কবিরাজি পেশায় জড়িত। বদরপুর মাদ্রাসার পীর ইলিয়াস হুজুর বদরপুর মাদ্রাসা ছেড়ে কালিয়াজুরি পিটিআই এলাকায় বাবুস সালাম জমিরিয়া মাদ্রাসা গড়ে তুলেন। দেশে ফিরে হুজুরের খাদেম হিসেবে যোগদেন মোবারক। সেও বদরপুর মাদ্রাসায় কোরআন পড়তে শিখেছে। ৩ সেপ্টেম্বর ইলিয়াস হুজুর ওমরাহ পালনে সৌদি আরব গেছেন। বাসার পাশে বলে ইলিয়াস হুজুরের কাছে জিন তাড়াতে ঝাড়ফুঁক করাতে মেয়েকে নিয়ে আসতেন মা, সেখানেই মোবারকের সঙ্গে তাদের পরিচয়। যার সূত্র ধরে একমাস ধরে খুন হওয়া মা- মেয়ের বাসায় তার যাতায়াত।
মোবারকের পূর্বের ধর্মপুর মাদ্রাসার এক ছাত্রী বলেন, উনি মেয়ে পটানোর কালোজাদু করতেন। উনার চিকিৎসা নেওয়ার জন্য অনেক রাজনৈতিক নেতারাও আসতেন। তারা উনাকে চালের বস্তা, তেল, চিনি থেকে যাবতীয় কিছু দিতেন মাদ্রাসা চালাতে। এভাবে তিনি সচ্ছল হয়ে উঠেন।




0 coment rios: