28 Jul 2025

জমে উঠেছে পেয়ারার ভাসমান হাট

 

মোঃমনিরুজামান
স্টাফ রিপোর্টার

ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের ভীমরুলি খালে বসে ভাসমান পেয়ারার হাট। ভাসমান এ হাট দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক আসেন। এমনকি বিদেশি পর্যটকরাও পেয়ারা বাগান ও ভাসমান হাট দেখে মুগ্ধ হন।

সম্প্রতি ভাসমান পেয়ারার বাজার দেখতে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আবদেলোহাব সায়দানি। পরিদর্শন শেষে রাষ্ট্রদূত জানান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যবাহী ভাসমান বাজার দেখে তিনি মুগ্ধ। আলজেরিয়ায় পেয়ারা উৎপাদিত হয় না। এখান থেকে পেয়ারা রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রতিদিন সকালে ছোট ছোট নৌকায় করে পেয়ারা বিক্রির জন্য এ হাটে আসেন চাষিরা। শ্রাবণ মাসের প্রথম থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পেয়ারার মৌসুম। এ সময় প্রতিদিনই এখানে পেয়ারা বিক্রি হয়। তবে অন্য দিনের তুলনায় শুক্রবার কেনাবেচা বেশি হয়। বর্তমানে মণপ্রতি পেয়ারা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা। এখানে পেয়ারার পাশাপাশি আমড়া, লেবুসহ অন্যান্য ফল ও শাকসবজিও বিক্রি হয়।

পর্যটককে বিনোদন দিতে বেসরকারি উদ্যোগে এখানের পেয়ারা বাগানের মধ্যে পার্ক গড়ে উঠেছে। শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।পেয়ারা চাষি পরিমল হালদার কালবেলাকে বলেন, এ বছর পেয়ারার ফলন তেমন ভালো হয়নি। দাম মোটামুটি ভালো পাওয়া যচ্ছে। বিগত বছরের চেয়ে এ বছর চাষিরা বেশি লাভবান হবেন।

পেয়ারা চাষি সব্রজিৎ কালবেলাকে বলেন, আমাদের অঞ্চলে ২০০ বছর ধরে পেয়ারা চাষ হয়ে আসছে। বাবা-দাদার পর এখনো আমরা এই পেয়ারা চাষের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। আমাদের প্রধান আয়ের মাধ্যম হলো পেয়ারা চাষ। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় ফলন ভালো হয়নি। বিগত বছরগুলোতে প্রতিদিন ৪-৫ মণ পেয়ারা বিক্রি করেছি আর এ বছর ১০ থেকে ৬০ কেজি পেয়ারা বিক্রি করি।

পেয়ারা আড়তদার সঞ্চয় হালদার কালবেলাকে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের এখানে পাইকাররা পেয়ারা ক্রয় করার জন্য আসেন। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর পেয়ারার দাম দ্বিগুণ কারণ পেয়ারার ফলন কম। এতে পাইকারদের তেমন লাভ হয় না।

পেয়ারার পাইকার জামাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমরা এখান থেকে পেয়ারা কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এখানকার পেয়ারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে এ বছর প্রতি কেজি পেয়ারা যদি ৪০ টাকা দরে কেনা লাগে তাহলে আমরা বিক্রি করব কয় টাকা। ৫০ টাকা যদি দাম চাই তাহলে ক্রেতারা সেটা কিনবে না। আমাদের এখান থেকে পেয়ারা নিতে গাড়ি ভাড়া, তারপর শ্রমিকের মজুরি। সব মিলিয়ে এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। গত বছর পেয়ারার দাম কম হওয়ার কারণে চাষিরা অনেকে পেয়ারা গাছ কেটে অন্য গাছ যেমন আমড়া, লেবু এসব গাছ লাগিয়েছেন। তা ছাড়া এ বছর আবহাওয়া ভালো না থাকায় ফলন ভালো হয়নি।

ভীমরুলি গ্রামের প্রবীণ ভবেন্দ্রনাথ হালদার কালবেলাকে বলেন, পেয়ারা এ অঞ্চলের মানুষের আবেগ। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলের মানুষ পেয়ারা চাষ করে আসছে। এখানে প্রায় শতভাগ পরিবার পেয়ারা চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

ঝিনাইদহ থেকে আসা পর্যটক মশিউর রহমান বলেন, ঝালকাঠির পেয়ারা বাগান ও ভাসমান হাট দেখে সত্যি মুগ্ধ হয়েছি। এখানে ঘুরতে খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে পেয়ারা পার্কে নিজেই পেয়ারা ছিঁড়ে খেতে পারা যায়।

কুড়িয়ানা পেয়ারাপার্ক পিকনিক স্পট অ্যান্ড ইকো কটেজের স্বত্বাধিকারী অর্নব মজুমদার কালবেলাকে বলেন, দিন দিন পেয়ারা পার্কে পর্যটকের সাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে দেশের বাইরে থেকেও পর্যটক আসেন। আমরা তাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। পেয়ারা ও আমড়ার মৌসুমে এখানে পর্যটক আসেন। এখানের বিশেষত্ব হলো পর্যটকরা নিজেরা পেয়ারা গাছ থেকে ছিঁড়ে স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বছর জেলায় ৫৬২ হেক্টর জমিতে পেয়ারার আবাদ হয়েছে। আশা করি, এ থেকে ৫ হাজার ৬২৬ টন পেয়ারা পাওয়া যাবে এবং সেটি বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা পাওয়া যাবে।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: