ভাঙ্গা উপজেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুরঃ
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বৃত্তি পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সকল বেসরকারি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
বৃহস্পতিবার(২৪ জুলাই) দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভের এই আয়োজন করা হয়।
বিক্ষোভ শেষে শিক্ষকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমানের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষকরা দাবি করে বলেন, জুলাই বিপ্লবের বাংলায় বৈষম্যের ঠাই নাই- প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় বৈষম্য নয়, সাম্য চাই।
এই স্লোগান নিয়ে তাদের দাবি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা-২০২৫ এ কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি নিয়ে তারা রাস্তায় নেমেছেন।
সারা দেশের ন্যায় ভাঙ্গাতেও একযোগে তারা এই মানববন্ধন কর্মসূচির পালন করেছে।
বক্তারা আরো বলেন, তাদের এই আন্দোলন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অথবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নয়। তাদের দাবি সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে এই কোমলমতি শিশুদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা একটি চরম বৈষম্য শিক্ষানীতির সাথে সাংঘর্ষিক।
সম্প্রতি সরকারিভাবে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা এবছর থেকে আবার শুরু হবে মর্মে ঘোষনা এসেছে কিন্তু সেখানে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, এতে করে বঞ্চিত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে সরকারের প্রতি বিরূপ ধারণা জন্মাবে। এতে ভেঙ্গে পড়বে বেসরকারির শিক্ষার মান ও বৈষম্যমূলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করার শামিল হবে। এর দায়ভার সরকারের ঘাড়েই বর্তায়।
২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবং ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত বৃত্তি পরীক্ষায় স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে দেখিয়েছে।
তাদের সেই ধারাবাহিকতা যেন রক্ষা করে পরিপত্র সংশোধন করে নেন সেই দাবি তুলেছে শিক্ষার্থীরা সরকারের প্রতি।
তারা আরো দাবি করেন, কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একই জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে, একই বই পড়ে, কিন্তু তাদের মেধা যাচাইয়ের কোন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না, বৃত্তি পরীক্ষা একটি জাতীয় পর্যায়ের মেধা যাচাই। যা সকল শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত। বৃত্তি শুধুমাত্র একটি আর্থিক অনুদান নয়, এটি একটি শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস, সামাজিক স্বীকৃতি এবং শিক্ষাগত অগ্রগতির অনুপ্রেরণা।
যখন একজন শিক্ষার্থী দেখবে তার বন্ধুরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে কিন্তু বেসরকারীরা নিতে পারছে না তখন তার মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি বৈষম্যমূলক মনোভাব গড়ে তোলে, যা জাতীয় শিক্ষানীতি ও সাম্যের পরিপন্থী।
প্রাথমিক শিক্ষা মানে কেবল সাক্ষরতা নয়, এর মানে হচ্ছে জাতি গঠনে ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্ত ভিত গড়ে দেওয়া।
সেই ভিত গড়ার প্রথম ধাপেই যদি বৈষম্য শুরু হয়, তাহলে আমরা কিভাবে সমতার সমাজ গড়বো? তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে সরকার। সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে আসা উচিত সরকারের, এমন মন্তব্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
কোন শিক্ষার্থী তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা কাম্য নয়।
জুলাই বিপ্লবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষার্থীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান বৈষম্য বিরোধী অন্তর্বর্তী সরকার। বর্তমান সরকারের সময়ে এই বেসরকারি শিক্ষার্থীরা আবার সেই বৈষম্যের শিকার হোক এটা অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত হবে সরকারের। এক্ষেত্রে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধার স্বীকৃতি দিতে হবে।
এমন সিদ্ধান্তে অসংখ্য অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
৬ বছরের অর্জিত জ্ঞান প্রমাণ করা থেকে শিক্ষার্থীরা বাদ পড়ায় সম্প্রতি সরকারের জারিকৃত পরিপত্রের সংশোধন করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পুনরায় বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ এ অংশগ্রহণ করে দিয়ে জাতির ঐক্যকে আরো শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তারা।
ভাঙ্গা উপজেলা কিন্ডারগার্টেন ও প্রি-ক্যাডেট স্কুল এসোসিয়েশনের সভাপতি কুমারেশ ভৌমিকের নেতৃত্বে মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন ভাঙ্গা উপজেলার প্রায় শতাধিক বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।




0 coment rios: