Wednesday, 2 July 2025

ভাতা কার্ডের কথা বলে দলিলে স্বাক্ষর, সম্পত্তি লিখে নেন ছেলেরা

 


বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে বৃদ্ধ মা-বাবাকে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে সব সম্পত্তি লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই ছেলের বিরুদ্ধে। সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর ছেলে ও ছেলের বউরা মিলে বৃদ্ধ দম্পতিকে শারীরিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।

ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের কুসুম্বী গ্রামে।

ভুক্তভোগী সানোয়ার হোসেন মন্ডল (৬৭) ও মোছা. মতিজান নেছা (৬০) ওই গ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্তরা হলেন, তাদের দুই ছেলে মোক্তার হোসেন (৩৫) ও মানিক হোসেন (২৮)।

এ বিষয়ে বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে ন্যায্য অধিকার ও ভরণপোষণের সুব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবিতে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন বৃদ্ধ সানোয়ার হোসেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃদ্ধ সানোয়ার হোসেন বাবার ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া তিন বিঘা ফসলি জমি ও দুই বিঘা পুকুরে ফসল এবং মাছ চাষ করে সংসার চালাচ্ছিলেন। সংসারটা তার ভালোই চলছিল। কিন্তু ছেলেদের বিয়ের পর থেকেই তাদের জীবনে অন্ধকারের কালো ছায়া নেমে আসে। ধীরে ধীরে ছেলে ও ছেলের বউদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ান এই বৃদ্ধ দম্পতি। মা-বাবার থাকা, খাওয়া, ওষুধপত্র, পোশাকাদি নিশ্চিত করাসহ ভরণপোষণের সব ধরনের দায়িত্ব থেকে সরে আসেন মোক্তার ও মানিক। নিজের বাড়িতে পরবাসীর মতো হয়ে থাকতে হতো সানোয়ার-মতিজান দম্পতিকে।

তিন বছর আগে মোক্তার ও মানিক বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া কথা বলে বৃদ্ধ মা-বাবাকে তাড়াশ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে নিয়ে যান। এরপর আগে থেকেই নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে রাখা দলিলে কৌশলে স্বাক্ষর করিয়ে সম্পূর্ণ সম্পত্তি দুই ভাই রেজিস্ট্রি করিয়ে নেন।

বৃদ্ধ সানোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে আমাদের জমি লিখে নিয়েছে। আমরা বুঝি নাই ওইটা জমির দলিল ছিল। আমাদের সব সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নেওয়ার পর প্রায় মাসখানেক ভালোভাবে দেখাশোনা করেছে তারা। এক মাস পর থেকেই কারণে-অকারণে চড়াও হতে থাকে। আমরা যে জীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে বাস করি, সেখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয়। ৬ বছর ধরে ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে রেখেছে। আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। দুই ভাই মিলে দফায় দফায় মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বৃদ্ধ বলেন, ছেলে ও ছেলের বউদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা আমার স্ত্রীর বড়বোন খোদেজা খাতুনের বাড়ি আশ্রয় নেই। কিছুদিন পর স্ত্রীকে সেখানে রেখে আমি ঢাকায় গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি করি। প্রায় দুই বছর চাকরি করি। বয়স ও অসুস্থতার কারণে চাকরি চলে যায়। মে মাসে বাড়ি ফিরে আসলে ছেলেরা আমাদেরকে বাড়িতে উঠতে দেয় না। বিষয়টি নিয়ে গাঁয়ের মাতব্বররা সালিশ করলেও ছেলেরা সেটা মানে না। পরে নিজের সঞ্চিত কিছু টাকা দিয়ে টিনের ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বাস করতে থাকি। ওই বাড়ি থেকে বের করে দিতে ছেলে এবং ছেলের বউদের নির্যাতন শুরু করে।

বৃদ্ধের স্ত্রী মতিজান নেছা বলেন, আমাদের বয়স হয়েছে, কোনো কাজ করতে পারি না। চেয়েচিন্তে যা পাই তাই দিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন চলে। তার ওপর প্রতিনিয়ত ছেলে ও ছেলের বউদের শারীরিক-মানসিক নির্যাতনে বেঁচে থাকাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বারুহাস ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মো. রাজিব সরকার রাজু জানান, দুই ছেলে মিলে তাদের বাবা ও মায়ের সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নিয়েছেন। যা নিয়ে একাধিক বার গ্রাম্য শালিসও হয়েছে। কিন্তু তাদের ছেলেরা কারও কথাই মানে না।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মোক্তার হোসেন বলেন, বাবা ও মা নিজের ইচ্ছায় আমাদের নামে জায়গা লিখে দিয়েছেন।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান কালবেলাকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি ওই অসহায় দম্পতিকে কীভাবে সহায়তা করা যায় বিষয়টি ভাবছি।



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: