Saturday, 12 July 2025

নির্বাচনী হাওয়ায় উত্তাল কিশোরগঞ্জ। কিশোরগঞ্জ-১ (হোসেনপুর-কিশোরগঞ্জ সদর) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপিতে ৮ জামায়াতসহ অন্যান্য দলের ৬ জন




 আশরাফ আহমেদ,হোসেনপুর কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি 


দীর্ঘ প্রত্যাশিত আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিশোরগঞ্জ-১ (হোসেনপুর-কিশোরগঞ্জ সদর) আসনে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। বিভিন্ন হাটবাজার, রাস্তার মোড় ও অলিগলি ছেয়ে গেছে শুভেচ্ছা ও দোয়ার পোস্টার-ব্যানারে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্রই আলোচনায় কে হচ্ছেন এ আসনের কাঙ্খিত যোগ্য অভিভাবক। দীর্ঘ ১৫ বছর পর জনগনের ভোটের অধিকার ফিরে পেয়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একযুগ ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরনের আগ্রহ ও উচ্ছাস বিরাজ করছে। তাছাড়া এ আসনটি জেলার অন্যান্য আসনের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা জেলা ভিত্তিক সকল দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা থেকেই পরিচালিত হওয়ায় এ আসনের নেতাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে অন্য আসন গুলোতে। 

নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ১৫ হাজার ৫১১ জন। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৬১ হাজার ৪১৩ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ৫৪ হাজার ১৯৮৬ জন মহিলা ভোটার। ১৯৬৯ এর পাকিস্তান সরকারের বিরোদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। পরে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ডাঃ মো: ফজলুল করিম, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো: ফজলুর রহমান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মো: আলমগীর হোসাইন এবং ১৯৯১ সালে বিএনপির মাওলানা আতাউর রহমান খান বিজয়ী হন। পরবর্তীতে একাধারে ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং ২০১৮ ও ২০২৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনে সৈয়দ আশরাফের ছোট বোন ডা: জাকিয়া নূর লিপি আওয়ামী ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 

গত ৫ আগস্টে বৈষম্য বিরোধী আন্দোন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণহত্যাকারী ফ্যাসিষ্ট স্বৈরাচার আওয়ামী সন্ত্রাসী সরকার পতনের পর বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি রাজনীতিতে গণতন্ত্রের চর্চায় ভিন্ন মাত্রা যুক্তকরেছে। ইতোমধ্যে বিএনপির ৮জন মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলের ৬ জন মোট ১৪ জন প্রার্থী মনোনয় পাওয়ার প্রত্যাাশায় দৌড়ঝাপ করছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বা শোডাউন দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: মাজহারুল ইসলাম, জেলার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং গুরুদয়াল সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জননেতা মির্জা আব্বাসের ছোট ভাই কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মির্জা খোকন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্নু, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ.ঈ.ম ওয়ালী উল্লা রব্বানী, অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম, মো: রুহুল হোসাইন, জেলা বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মো: আতিকুর রহমান। 

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যাপক মোসাদ্দেক আলী ভূইয়া, গণঅধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন দলটির কেন্দ্রীয় উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, সিপিবির জেলা কমিটির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক, বাংলাদেশ খেলাফতে মসলিসের হেদায়াতুল্লাহ হাদী, ইসলামী আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মাওলানা ওবায়দুর রহমান নদভী, জাতীয় উলামা মাশায়েখ পরিষদের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আজিজুর রহমান মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযুগ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিএনপি’র ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতা ও বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রনায়ক, একাধিকবার কারানির্যাতিত যুবসমাজের প্রিয় নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল সুসংগঠিত ভাবে সভা সেমিনার ও শোডাউনের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে মাঠ সরগড়ম করে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি ভোটার ও জনগণের মন জয়ে তৃণমুল পর্যায়ে গণসংযোগ করে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী মাজহারুল ইসলাম, রেজাউল করিম খান চুন্নু ও হাজী ইসরাইল মিয়াও শোডাউন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে জোরে সোরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। 

অন্যদিকে পূর্বের ন্যায় হোসেনপুর-পাকুন্দিয়া দুই উপজেলায় পুনরায় এক আসন হওয়ার গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। হোসেনপুর পাকুন্দিয়া একত্রে আসন বিন্যাস হলে হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কারা নির্যাতিত জননন্দিত নেতা শিল্পপতি জহিরুল ইসলাম মবিনই হোসেনপুর উপজেলায় একমাত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন প্রত্যাশায় নির্বাচনী মাঠে সরব রয়েছেন। তাছাড়া এ আসনে সাংগঠনিক ভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক আলী ভূঁইয়া।

এদিকে গণ অধিকার পরিষদের আবু হানিফ, সিপিবির সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট এনামুল হক, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা ওবায়দুর রহমান নদভী, জাতীয় উলামা মাশায়েখ পরিষদের মো: আজিজুর রহমান   জার্মানি নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে ।  তবে জাসদসহ অন্যান্য বাম দলগুলোর নির্বাচনী তৎপরতা চোখে পড়েনা। 

এ বিষয়ে হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল ইউনিয়নের গলাচিপ গ্রামের বাসিন্দা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান জানান ইতোপূর্বে আওয়ামী সমর্থক সাধারন ভোটারগন সংসদ নির্বাচনে সৎ আদর্শ ও যোগ্য প্রার্থী যারা তৃনমূলে জনগনের কাছে এসে মন জয় করতে পারবে তাদের রায় প্রদানে ভোটের বাক্স ভারি করতে পারবেন।  

স্থানীয় রাজনৈতিক গভেষক ও সুধী মহল নির্বাচনী হালচাল বিশ্লেষন এবং জনসমর্থন বিবেচনায় মনে করেন, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অনুপস্থিত থাকায় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য লড়াই হতে পারে। তবে বিএনপির কান্ডারী তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলটি সুসংগঠিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ থেকে যোগ্য প্রার্থী মনোনিত করলে এ আসনে বিএনপিই নির্বাচিত হবে বলে তারা ধারনা করছেন।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: